ত্বক তৈলাক্ত হওয়ার অন্যতম কারন শরীরে মেদবহুল অঙ্গ থাকা। তৈলাক্ত ত্বক ঘটে যখন ত্বকের সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলি খুব বেশি সেবুম তৈরি করে। সেবুম হল মোমযুক্ত, তৈলাক্ত পদার্থ যা ত্বককে সুরক্ষা দেয় এবং হাইড্রেট করে। দেহের সুন্দর গঠন এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে এই গ্রন্থি অসাধারন ভুমিকা পালন করে থাকে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসৃত হলে ত্বক তৈলাক্ত ও ব্রনের সৃষ্টি হয়।
এই পোস্টের মাধ্যমে জানা যাবে, প্রাকৃতিকভাবে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন কিভাবে নিতে হয়? ত্বকে তৈলাক্ত ভাব দেখা দিলে এবং মোমযুক্ত বা সেবুক জাতীয় গ্রন্থি বেশি উৎপাদন হলে কিভাবে স্বাভাবিক রাখতে হয়?
ধৌত করা
নিয়মিত ধৌতের মাধ্যমে ত্বকে তৈলাক্ত ভাব দূর করা যায়। এভাবে জল দ্বারা ধৌত করার কারনে ত্বকে তৈলাক্ত অনেক কমে যায়। নিচে ধৌত করার সাধারন কিছু নিয়ম বলা হলঃ-
১। মৃদু সাবান এবং উষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২। সুগন্ধি যুক্ত ময়েশ্চারাইজার বা কঠোর রাসায়নিকের সাথে সাবানগুলি এড়িয়ে চলুন যা ত্বককে জ্বালা করে বা শুষ্ক করতে পারে, এটি আরও সিবাম তৈরি করে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
৩। রুক্ষ ও মোটা কাপড় দ্বারা ধৌত করা থেকে বিরত থাকুন। এতে তৈলাক্তভাব দূর হওয়ার চেয়ে বেশি পরিমানে উৎপাদন হতে পারে।
উপরের উপায়গুলো প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়াভাবে করা যায়। তবে বাজারে অনেক প্রসাধনী পাওয়া যায় তৈলাক্ত ত্বক দুরীকরনে। সাধারনত এই সকল প্রসাধনীতে বিভিন্ন প্রকারের দুর্বল এসিড থাকে। স্যালিসাইলিক এসিড, গ্লাইকলিক এসিড, বিটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড, বেনজাইল পারক্সাইড। এই সকল এসিড ব্যবহার করার পূর্বে আক্রান্ত ত্বকে অল্প পরিমান ব্যবহার করবেন। এতে সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার ত্বকে কি ধরনের প্রভাব ফেলে। ২০১৫ সালের একটা গবেষনা থেকে জানা যায় যে, সঠিক ফেসিয়াল ক্লিনজার নির্বাচন করা কিছু লোকের পক্ষে ভাল কাজ করতে পারে।
টোনার ব্যবহার
যে সকল টোনার ত্বকের তৈলাক্ত শোষন করতে সাহায্য করে সেই সকল টোনার ব্যবহার করা। কিছু বৃক্ষবিশেষ গাছপালা এবং অ্যালকোহল তৈলাক্ত শোষণে দারুন ভুমিকা পালন করে। অ্যালকোহলযুক্ত অ্যাস্ট্রিজেন্ট টোনারগুলি তৈলাক্ত ত্বককে শুকাতে সাহায্য করে থাকে। ২০১৪ সালের একটা গবেষনা অনুসারে হ্যাজেল গাছে প্রচুর পরিমানে অ্যাস্ট্রিজেন্ট থাকে। এই অ্যাস্ট্রিজেন্ট ত্বকে তৈলাক্ত ভাব শোষন করে ত্বককে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। সকল প্রকার ত্বকের জন্য এই প্রাকৃতিক রেমিডি কাজ নাও করতে পারে। অনেক দেশেই শুধু টোনার হিসাবে ব্যবহার করে তৈলাক্ততা দূর করা হয়।
মুখ শুকনো
ত্বক ভালকরে ধৌত করার পর টোনার ব্যবহার করতে হয়। মুখে টায়াল দিয়ে ভালকরে পরিস্কার করতে হয়। খসখসে টাওয়াল ব্যবহার করবেন না। এতে সেবাম রোধ করার চেয়ে বেশি পরিমানে নির্গত হয়। ফলে ত্বক বেশি তৈলাক্ত দেখায়। মুখ শুকনো নরম বা সুতি গামছা বা টায়াল দিয়ে পরিস্কার করে নিতে হবে।
ব্লটিং পেপার ব্যবহার করুন
বাজারে স্বাস্থ্য সম্মত বিভিন্ন প্রকারের ব্লটিং পেপার তৈরি করা হয়। এই পেপার গুলো একটা বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয় যা ত্বকের তৈলাক্ত শোষন করতে পারে। এই পেপার ত্বকে চকচকে করতে ব্যবহার করা হয় না। এই পেপার ব্যবহার করা হয় ত্বকে অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব দেখা দিলে সেটা শোষন করে নেয়ার জন্য। এই পেপারের সাথে স্যালিসাইলিক এসিড বা গ্লাইকোসাইটিক এসিডের সমন্বয়ে গঠিত। ফলে মুখের এবং ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে দারুন কাজ করে থাকে।
ফেসিয়াল প্যাক
ফেসিয়াল প্যাক ব্যবহার করে সহজেই ত্বকের তৈলাক্ত দূর করা যায়। কয়েকটি প্রাকৃতিক উপায়ে ফেসিয়াল মাস্ক বা প্যাক তৈরি করা হয়ে থাকে।
-
কাদামাটি বা ক্লে
কাদামাটি বা ক্লে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে থাকে। কাদামাটির ফেসিয়াল প্যাক মুখে অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করে ত্বককে চকচকে, স্বাভাবিক ত্বকে রুপান্তর করে থাকে। কাদামাটির ফেসিয়াল প্যাক ব্যবহারের পর ভাল করে পরিস্কার করতে হবে। পরিস্কার করার পর ময়েশ্চাইজার ব্যবহার করতে হবে।
-
মধুর ফেসিয়াল
মধুর উপকারিতা অপরিসীম। মধু শুধু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি নয়। এটা ত্বকের ফেসিয়াল হিসাবে দারুন কাজ করে থাকে। ২০১১ সালে এই গবেষনা থেকে জানা যায় যে, মধুতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিসেপটিক গুণাবলী। এই প্রাকৃতিক জৈব উপাদান ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে থাকে। ১০ মিনিট মধুর ফেসিয়াল প্যাক ব্যবহার করলে ব্রন ও মেছতা দূর করে থাকে।
বাংলাদশ এবং ভারতে এই দুই ধরনের ফেসিয়াল পাক ব্যবহার বেশি দেখা যায়। প্রাকৃতিকভাবে এবং অনেক সাশ্রয়ী।
ময়েশ্চারাইজার লাগান
২০১৪ সালের একটা গবেষনা থেকে জানা যায় যে, ভাল মানের অ্যালোভেরা তৈলাক্ত ত্বক এবং ব্রনের চিকিৎসায় ব্যবহার করা উচিত। বাজারে অ্যালোভেরা পন্যের নামে অনেক পন্য বিক্রি করা হয়। তবে যে পন্যের মধ্যে শতকরা ১০ অংশ অ্যালো রয়েছে সেগুলো ত্বকের জন্য উপযুক্ত।
সারাংশ
তৈলাক্ত ত্বক স্বাভাবিক ৬ টি প্রাকৃতিক উপায় বলা হয়েছে। যে সকল প্রাকৃতিক উপায়ের কথা বলা হয়েছে সবগুলোই অসাধারন ভূমিকা পালন করে থাকে। তৈলাক্ত ত্বক চিকিৎসা অনেক জটিল প্রকৃতির। অনেকেই মেকাপ ব্যবহার করে তৈলাক্ত ত্বক স্বাভাবিক করতে চায়। তখন ত্বকে কালো কালো দাগ, গর্ত হয়ে যায়। তবে ব্রন ও মেছতার সৃষ্টি হয়। তাই তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে খেয়াল রাখা উচিত তৈলাক্ত ত্বকের গুরুতর ব্রণ এবং ত্বকের লক্ষণযুক্ত একজন ব্যক্তির ত্বককে সুরক্ষিত করার জন্য এবং গুরুতর জটিলতা বা দাগ রোধ করার সর্বোত্তম উপায়ের জন্য চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Discussion about this post