রোযার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহুর সন্তুষ্টি অর্জন করা, পাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখা, সকল ধরনের কাম বাসনা নিজের নিয়ন্ত্রনে রেখে পরহেজগার বা তাকওয়া বৃদ্ধি করা। সুন্দর ও শৃঙ্খল জীবন যাপনে ইসলামের এই জীবন ব্যবস্থাকে পাপকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখতে সহায়তা করে থাকে।
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) বলেছেন প্রতিটি বস্তুর যাকাত আছে। তোমার ধন-সম্পদের যেমন যাকাত আছে। তেমনি রোজার মাধ্যমে শরীরের যাকাত প্রদান করা হয়। অতএব, উপযুক্ত বয়সে সকল নর-নারীর রোজা রাখা উচিত। সঠিকভাবে রোজা রাখলে শরীরর যাকাত প্রদান করা হওয়ার সাথে নিজের স্বাস্থ্যের অনেক উপকার হয়।
রোজা কি ও শব্দের অর্থঃ
রোজা শব্দটা এসেছে ফার্সি শব্দ থেকে। যার অর্থ ‘সাওম’। সাওম শব্দটা এসেছে আরবি শব্দ থেকে যার অর্থ বিরত থাকা। রোযা কাকে বলে? সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল ধরনের পাপাচার, কামাচার, পাপকাজ থেকে বিরত থাকার নামই রোযা। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রাপ্তবয়স্ক সকল নর-নারীর জন্য রোযা ফরজ করা হয়েছে। যা প্রতিটি আনুষের অবশ্য পালনীয়।
রোজার ইতিহাসঃ
হযরত আদম(আঃ) যখন নিযিদ্ধ ফল খেয়েছিলেন তখন তিনি আল্লাহুর কাছে তাওবাহ করেছিলেন। ৩০ দিনের আগ পর্যন্ত আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করেননি। ৩০ দিনের পর আল্লাহু তার তাওবাহ কবুল করে নেন। তারপর থেকে তার সকল সন্তানের উপর ৩০ টা রোজা ফরজ করে দেয়া হয়েছে।
কোরআনে ঘোষনা করা হয়েছে যে,
‘রোজা সকল নর-নারীর উপর ফরজ করা হয়েছে,যা তাদের পূর্ববর্তী পুরুষের উপর ফরজ করা হয়েছিল’ যাতে সকল নরনারী নিজেদের তাকওয়া বৃদ্ধি করতে পারে,
হযরত দাউদ(আঃ) যুগে রোযার প্রচলন ছিল। তার রোযা ছিল আল্লাহুর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। যত ব্যক্তি রোজা করেছেন তার মধ্যে দাউদ (আঃ) রোযা তার কাছে অনেক প্রিয় ছিল। একদিন পর পর তিনি রোজা রাখতেন। একদিন রোজা রাখতেন, একদিন বিনা রোজার থাকতেন।
আরববাসিরা প্রাচীনকাল থেকেও রোজা সম্পর্কে কমবেশি মানতেন। অনেকেই এই রোজা পালন করতেন। একেক জন একেক ভাবে রোজা রাখতেন। মদীনায় ইহুদীরা আলাদাভাবে আশুরা পালন করতেন এবং গনানুসারে ৭ম মাসে ১০তম দিনে উপবাস করতেন।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে রোযার উপকারিতাঃ
আমাদের শরীর পরিচালনা করার জন্য শক্তির প্রয়োজন। খাদ্য থেকে সেই শক্তি পেয়ে থাকি। সেই শক্তি কাজে লাগিয়ে আমাদের দৈনিক জীবন পরিচালনা করা হয়। মানুষদেহ বিলিয়ন বিলিয়ন কোষ দ্বারা তৈরি। সেই সকল কোষের মাধ্যমে আমরা দেহের প্রতিটি অঙ্গে শক্তি পেয়ে থাকি। কোষ মারা গেলে রোজার সময় সেই কোষগুলো থেকে দেহে শক্তি সঞ্চালন করে থাকে মানবদেহে। মানবদেহের এই শক্তির অন্যতম একটা উৎস মৃত কোষগুলো।
শরীরে সারা বছর অতিরিক্ত চর্বি যারা গ্রহন করে তাদের দেহে নানা প্রকার চর্বি জমা হয়।ভালো চর্বি হিসাবে জমা হয়, এইচডিএল-সি, খারাপ চর্বি হিসাবে এলডিএল-সি। রোজার সময় খারাপ চর্বি এলডিএল কাটতে থাকে। সেটা শোষনের ফলে শক্তি বা এনার্জি দিতে থাকে শরীরে। রোজার সময় খারাপ চর্বি কেটে ভালো চর্বিতে পরিনত করে আমাদের শরীরে শক্তির সঞ্চার করে।রোজার রাখার সময় কিছু সাধারন নিয়মের মধ্যে অন্যতম নিয়ম, যাদের পানির পিপাসা লাগবে তারা সেহেরির সময় মধু পান করলে সেই পিপাসা কম লাগবে।
সেহেরী ও ইফতারি আমাদের ইসলামীক জীবনে অনেক বরকত দান করে থাকে। তাই সঠিক সময়ে ইফতারি করা, সেহরি করা কল্যানকর ও উপকারি। আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) খেজুর দিয়ে ইফতারি করতে বলতেন। খেজুরের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি ভিটামিনসহ উচ্চ ফাইবারযুক্ত যা আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমানে শক্তির যোগান দিয়ে থাকে। এই কারনে নবীজী ইফতারের সময় খেজুর দিয়ে ইফতারি করতে বলেছেন।
উপসংহারঃ
ইসলাম শান্তির ধর্ম, প্রতিটি কাজ জীবনের জন্য, জীবনযাপনের মানকে বৃদ্ধি এবং সকল ধরনের অশান্তি ও অকল্যাণকর জীবন থেকে ইসলাম দূরে রাখে। ইসলামীক জীবনযাপন আপনার জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধ করে তুলবে। রোজার দিনে শরীরের যাকাত দেয়া উচিত। এতে করে আমরা সকল শ্রেনীর মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও দোয়া আসবে। আনাহারে কেউ থাকলে তার প্রতি যাকাত দেয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
Discussion about this post