মেলানিন হচ্ছে মানুষের শরিরের ত্বকের একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান।এটি একটি জটিল পলিমার যা অ্যামাইনো এসিড টাইরোসিন থেকে পাওয়া যায়।এটি এক প্রকার রঞ্জক পদার্থ যা মেলানোসাইট কোষ থেকে উতপন্ন হয়ে মানুষের শরিরের চামড়ার এপিডার্মিস স্তরে অবস্থান করে।
এই মেলানিনের উপস্থিতির জন্য মানুষের শরিরের চামড়া, চুল ও চোখের রংয়ের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।মানুষের গায়ের রং এই মেলানিনের উপস্থিতির কম বেশির উপর নির্ভর করেই ফর্সা, কালো নির্ধারিত হয়।নানা রকম বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটি প্রমানিত হয় যে এই মেলানিনের আধিক্যের কারনেই মানুষের গায়ের রং কালো হয়।বংশানুক্রমে জিনগত বৈশিষ্ট্যের ধারাবাহিকতায় মানুষের রংয়ের এই ভিন্নতা চলে আসে।
মেলানিনের উপস্থিতির কমের জন্য জাতিগত ভাবে ইউরোপ, আমেরিকার মানুষেরা ফর্সা বা সাদা আর এশিয়া,আফ্রিকার মানুষেরা কালো অথবা বাদামী রংয়ের হয়ে থাকে।মানুষের শরিরে বিভিন্ন কারণে মেলানিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
যেমন:অতিরিক্ত রোদে পুড়া,হরমোন পরিবর্তন,বিভিন্ন রোগ ও রোগের ওষুধের প্রভাব।
মানুষের শরিরের বিভিন্ন অংগে মেলানিনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।সাধারণত শরিরের চামড়া,চুল,চোখ,মধ্যকর্ন,মস্তিষ্ক ও মুত্রগ্রন্থিতে এর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
মানুষের শরিরে মূলত তিন ধরনের মেলানিন রয়েছে।
১.ইউমেলানিন
২.ফিওমেলানিন এবং
৩.নিউরোমেলানিন।
১। ইউমেলানিন
এই মেলানিন বিশেষত কালো মানুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়,যার কারনে ওই মানুষদের চোখ, চুল ও চামড়া কালো রংয়ের হয়ে থাকে। অল্প পরিমানের ইউমেলানিনের উপস্থিতির কারনে কারো কারো চুলের রং সোনালি হয়ে থাকে। ইউমেলানিন সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে : ১.বাদামী ইউমেলানিন এবং ২.কালো ইউমেলানিন।
২। ফিওমেলানিন
এই মেলানিন বিভিন্ন ধরনের হলুদ বর্ণ থেকে লালচে বর্ণ ধারণ করে।এটি বিশেষত ঠোঁট, স্তনবৃন্ত, পুরুষাংগের গ্লান এবং যোনিতে ঘন থাকে।আর কিছু মানুষের চামড়া ও চুলে এটি বেশি দেখা যাওয়ার কারনে তাদের চামড়া ও চুল লাল এবং গোলাপি রংয়ের হয়ে থাকে।এটি ইউমেলানিনের মত সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি থেকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি জিবানু প্রতিরোধ করতে পারে না।
৩। নিউরোমেলানিন
এটি অন্ধকারে দ্রবীভূত পলিমার রঞ্জক যা মস্তিষ্কের নিউরনের নিদিষ্ট অংশে উতপাদিত হয়।এই মেলানিনের অনুপস্থিতিতে মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ ও বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারে।এটি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমানে থাকে,যা অন্যান্য প্রজাতিতে কম পরিমানে উপস্থিত থাকে এবং অন্যান্য অনেক প্রজাতির মধ্যে একেবারে অনুপস্থিত থাকে।
এছাড়া ও মানুষের শরিরে মেলানিনের ঘাটতি হলে অ্যালবিনিজম বা শ্বেতি রোগ হয়ে থাকে। কখনো কখনো শরিরে মেলানিনের মাত্রা বেরে গেলে চামড়ায় কালো ছোপ ছোপ দাগ পরে যায় যাকে মেসতা বলা হয়,যা কিছুটা সৌন্দর্যহানিকারক হলেও বিশেষ ক্ষতিকারক নয়।
বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে যে মেলানিনের উপস্থিতির কারনে সাদার চেয়ে কালো গায়ের রংয়ের মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি হয়ে থাকে।আর এটি প্রতিরক্ষাকারী রঞ্জক পদার্থ হিসাবে মানুষের শরিরে ডি এন এ ধ্বংসকারি এবংসম্ভাব্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারি অতি বেগুনী রশ্মির বিকিরনকে বাধা প্রদান করে।যে সব মানুষের ত্বকে মেলানিন বেশি থাকে তাদের ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ও কম থাকে।
সারাংশ
গবেষকেরা এটা ও বলেন যে মেলানিন একই সাথে আমাদের রক্ষাও করে আবার ক্ষতিও করে।কেননা যদিও মেলানিন আমাদের রক্ষা করে কিন্তু একই সাথে এটি সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মির সংস্পর্শে এসে বিক্রিয়া করে মেলানিনের ভিতরের ক্ষতিকর ইলেকট্রনকে উজ্জীবিত করে আমাদের কোষকে ধ্বংস করার চেষ্টাও করে। তাই গবেষকগণের মতে আমাদের জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সূর্যের আলোতে বাইরে না যাওয়া বিশেষ করে সকাল ১০:০০ থেকে দুপুর ০২:০০ পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল।প্রয়োজনে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন,পর্যাপ্ত কাপড়, রোদ চশমা ও ছাতা নিয়ে বের হওয়া উচিত।
Discussion about this post