ড্রাগন এক ধরনের ফল যা শুরুর দিকে মেক্সিকো, দক্ষিন আমেরিকার চাষ করা হয়। এটি একধরনের ক্যাকটাস বা ফনীমনসা প্রজাতির ফল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি মিষ্টি পিতায়য়া (হায়লেসিরিয়াস)। চীনা বৈজ্ঞানিক নাম Hylocereus undatu, বিভিন্ন দেশে এটাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। গনচীনের লোকেরা ড্রাগন ফলকে আগুনে ড্রাগ ফল এবং ড্রাগন মুক্তার ফল বলে। ভিয়েতনামে এটাকে মিষ্টি ড্রাগন বলে থাকে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াকে এটাকে ড্রাগন ফল বলে থাকে।
ড্রাগন ফলের উপকারিতা
এই ফলে রয়েছে অনেক উপকারিতা। দামে বেশি হলেও এই ফলের উপকারিতার সম্পর্কে জানলে চমকে যাবেন। একটা ড্রাগন ফলে সবচেয়ে বেশি থাকে ক্যালরি। ক্যালরির পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-সি, ওমেগা-৩, ওমেগা-৯ বিদ্যমান রয়েছে। এই সকল উপাদানের পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিক্সিডেন্ট রয়েছে। নিচে এই ফলের গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা বিস্তারিত বর্ণনা করা হলোঃ
চুলপড়া প্রতিরোধ করেঃ
চুলপড়ার অন্যতম কারন হলো আয়রনের ঘাটতি। ড্রাগন ফল রয়েছে আয়রন যা আমাদের চুল শক্ত করতে এবং চুলে শক্তি সরবরাহ করতে সহায়তা করে থাকে। তবে সবার জন্য এই ফল দিতে নাও পারে। এখানে শক্তিশালী কোণ প্রমান নাই যে ড্রাগন ফল চুলপড়া প্রতিরোধ করতে পারে। নিউ ইয়র্ক সিটির আইকান স্কুল অব মেডিসিনের ডার্মাটোলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্লিনিক্যাল প্রফেসর গ্যারি গোল্ডেনবার্গের মতে, আয়রনের অভাব পূরন করে থাকে, হাতে-পায়ে ঠান্ডা অনূভূতি দূর হরে, মনোনিবেশ সমস্যা দূরীকরনে সাহায্য করে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকেঃ
বর্তমানে অনেক এই রোগে ভুগে আসছে। এই ফলে রয়েছে ৭ ধরনের ফাইবার যা আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে। অন্ত্রের বর্জ্য দূরীকরনে সাহায্য করে থাকে। যাদের এই ধরনের রোগ রয়েছে তারা খাবারের সাথে ড্রাগন ফল সালাদ হিসাবে খেলে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে।
হার্টের উপকার করে থাকেঃ
এই ফলের ভিতরে দুইটা অসাধারন উপাদান ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৯ রয়েছে। হার্টের উপকারে এই উপাদানগুলোর দারুন ভুমিকা পালন করে থাকে। Omega-3 উপাদান হার্টের প্রদাহনাশক দুরীকরন করে থাকে। এছাড়া এই ফলের খাওয়ার ফলে বিষণ্নতাও কমতে পারে।
রক্ত চলাচল বজায় রাখেঃ
সারা বিশ্বে পরিচিত এক ঘাটতির নাম আয়রনের ঘাটতি। আমরা অনেক সময় পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করলেও আয়রনের কথা ভুলে যায়। একেক খাবারে একেক ধরনের আয়রন পাওয়া যায়। এই ফলের মধ্যে রয়েছে দারুন আয়রন যা মেয়েদের বা মহিলার খুব দরকার হয়ে যায়। হিমোগ্লোবিন তৈরি হওয়ার জন্য আয়রনের প্রয়োজন হয়। ১০০ গ্রাম একটা ড্রাগন ফলে প্রায় ১ দশমিক ৯ মিলিগ্রাম আয়রন পাওয়া যায় যা সুপারিশকৃত ১০ শতাংশের বেশি। হিমোগ্লোবিন রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে।
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে থাকেঃ
সর্বপরি যে কাজটা আমাদের শরীরে খুব দরকার সেটা হলো সকল ধরনের রোগ প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ড্রাগল ফলে মধ্যে রয়েছে অসাধারন সব স্বাস্থ্য উপকারি উপাদান যা আমাদের শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
ড্রাগল ফলের দামঃ
এই ফলের দাম নিয়ে রয়েছে অনেক সন্দেহ। আসলেই এই ফলের দাম অনেক বেশি হওয়ার অন্যতম কারন হলো এটার পুষ্টিগুন। এটা এতোই পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে যে চিন্তাই করা যায় না। এই ফলের দাম আকার ও আকৃতি ভেদে হয়ে থাকে। এক কেজি ড্রাগন ফলের দাম ৪০০-৬০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
ড্রাগন ফল কোথায় পাওয়া যায়?
ড্রাগন ফলের চাষ পাহাড়ি এলাকায় সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে পাহাড় এলাকায় এই ধরনের ফলের চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে রাঙ্গামাটি এলাকায় সবচেয়ে ভালো ড্রাগন চাষ করা হয়ে থাকে।
এই মহাপ্রজাতি হায়লোসিরিয়াস প্রথমে মেক্সিকো, দক্ষিন ও মধ্য আমেরিকায় চাষ শুরু হয়। এই ফলের অসাধারন উপকারের ফলে ধীরে ধীরে বিশ্বের প্রায় সকল দেশে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চাষাবাদ শুরু করেছেন। স্বাস্থ্যগত ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ার কারনে বাংলাদেশেও এই ফলের চাষ শুরু করেছে।
Discussion about this post